০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ধুনটে বাবা-মা হারিয়ে অনিশ্চয়তায় তিন এতিম শিশুর ভবিষ্যৎ

বগুড়ার ধুনট উপজেলার চালাপাড়া গ্রামের দিনমজুর বকুল হোসেন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দারিদ্র্য আর ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে তিনি দুই বছর আগে আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনের ইতি টানেন। তার অকাল মৃত্যুর পর তিন সন্তান—বড় মেয়ে ববিতা এবং ছোট দুই ছেলে হাশেম ও কাশেমকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নামেন তাদের মা জোসনা খাতুন।

অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার মাঝেও সন্তানদের জন্য লড়ে যাচ্ছিলেন জোসনা। তবে সংসারের বোঝা ও মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে গত ২১ আগস্ট সকালে তিনি গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেদিন রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ফলে বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে সম্পূর্ণ অনাথ হয়ে পড়েছে তিন শিশু। এখন তাদের মাথা গোঁজার সামান্য একটি ঘর ছাড়া আর কোনো আশ্রয় নেই। অন্ধকারে ঢেকে গেছে তাদের ভবিষ্যৎ—কে দেবে খাবার, বস্ত্র, শিক্ষা আর সুরক্ষার নিশ্চয়তা?

এতিম শিশুরা কাঁদতে কাঁদতে বলেছে, “বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। এখন মা-ও চলে গেলেন। আমরা কীভাবে বাঁচব জানি না।”

প্রতিবেশী আব্দুল হান্নান বলেন, “অসহায় সন্তান তিনটির মুখ দেখলে চোখে পানি চলে আসে। তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।”

ধুনট সদর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুন্নবী আকন্দ বলেন, “বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে তিন শিশু এখন একেবারেই অসহায়। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা ও আশ্রয়ের দায়িত্ব নেওয়া আমাদের মানবিক কর্তব্য। সরকারের পাশাপাশি সমাজের সব শ্রদ্ধাশীল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগেই এই এতিম শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করা সম্ভব।”

গ্রামবাসীর প্রত্যাশা—মানবিকতার নতুন স্বপ্ন দেখুক ববিতা, হাশেম ও কাশেম। সমাজের সবার ভালোবাসা ও সহায়তায় আলো ফিরে আসুক তাদের জীবনে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয়

ধুনটে বাবা-মা হারিয়ে অনিশ্চয়তায় তিন এতিম শিশুর ভবিষ্যৎ

০৮:২৯:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

বগুড়ার ধুনট উপজেলার চালাপাড়া গ্রামের দিনমজুর বকুল হোসেন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দারিদ্র্য আর ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে তিনি দুই বছর আগে আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনের ইতি টানেন। তার অকাল মৃত্যুর পর তিন সন্তান—বড় মেয়ে ববিতা এবং ছোট দুই ছেলে হাশেম ও কাশেমকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নামেন তাদের মা জোসনা খাতুন।

অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার মাঝেও সন্তানদের জন্য লড়ে যাচ্ছিলেন জোসনা। তবে সংসারের বোঝা ও মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে গত ২১ আগস্ট সকালে তিনি গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেদিন রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ফলে বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে সম্পূর্ণ অনাথ হয়ে পড়েছে তিন শিশু। এখন তাদের মাথা গোঁজার সামান্য একটি ঘর ছাড়া আর কোনো আশ্রয় নেই। অন্ধকারে ঢেকে গেছে তাদের ভবিষ্যৎ—কে দেবে খাবার, বস্ত্র, শিক্ষা আর সুরক্ষার নিশ্চয়তা?

এতিম শিশুরা কাঁদতে কাঁদতে বলেছে, “বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। এখন মা-ও চলে গেলেন। আমরা কীভাবে বাঁচব জানি না।”

প্রতিবেশী আব্দুল হান্নান বলেন, “অসহায় সন্তান তিনটির মুখ দেখলে চোখে পানি চলে আসে। তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।”

ধুনট সদর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুন্নবী আকন্দ বলেন, “বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে তিন শিশু এখন একেবারেই অসহায়। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা ও আশ্রয়ের দায়িত্ব নেওয়া আমাদের মানবিক কর্তব্য। সরকারের পাশাপাশি সমাজের সব শ্রদ্ধাশীল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগেই এই এতিম শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করা সম্ভব।”

গ্রামবাসীর প্রত্যাশা—মানবিকতার নতুন স্বপ্ন দেখুক ববিতা, হাশেম ও কাশেম। সমাজের সবার ভালোবাসা ও সহায়তায় আলো ফিরে আসুক তাদের জীবনে।