০১:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

কাজিপুরে দুইশ বছরের ঐতিহ্যের মাদার বাঁশের মেলা অনুষ্ঠিত

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় প্রতি বছরের মতো এবারেও অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী বাঁশের মেলা বা মাদার বাঁশের মেলা। উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়নের কুনকুনিয়া সর্দারপাড়ায় দুইশ বছরের পুরাতন এ মেলা জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রোববার বিকেল থেকে দোকানপাট বসে। চলে পরের দিন সোমবার বিকেল পর্যন্ত। তবে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আসা-যাওয়া চলে সপ্তাহজুড়ে। 

এ মেলাকে ঘিরে কুনকুনিয়া সর্দারপাড়া ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে চলে আনন্দ-উৎসব। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনেরা আসেন। চলে খাওয়া-দাওয়া। বিশেষ করে জামাই-ঝি নিয়ে আসা হয় বাড়িতে বাড়িতে। অনেকটা ঈদের ছুটির মতো এই গ্রামের যারা বাইরে বা দেশের নানাস্থানে থাকেন তারা মেলা উপলক্ষে ছুটি নিয়ে চলে আসেন বাড়িতে। 

 এ মেলা হয় একটি বিশেষ বাঁশকে কেন্দ্র করে। অনেক আগে থেকে এখানকার মানুষেরা বাঁশকে মাদার পীর হিসেবে গণ্য করে। একটি বড় বাঁশকে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে, চমর লাগিয়ে ও নানা রংয়ে সাজিয়ে ১৫-২০ জনের একটি দল বেরিয়ে পড়েন। ঢাক-ঢোল, সানাই বাজিয়ে গান গেয়ে বাড়ি বাড়ি যান তারা। এই দলটি  মাদারের ধামাইল, লাঠিবাড়ি খেলা ও শারীরিক নানা কৎরত দেখান। বিনিময়ে অনেকেই টাকা পয়সা, চাল-ডাল, নারকেল, খাবারসহ নানা কিছু দান করেন। কেউ কেউ মানত করে বাড়িতে মাদার নিয়ে এসে ধামাইল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। অনেক পরিবারের বউ ঝিদের উপর মাদারের আছর করে। মাদার চলাকালিন তারা মাছ মাংস কিছুই স্পর্শ করেন না। এসময় তিনি ঘরেই থাকেন । কারও সাথে কোন কথা বলেন না। তবে অনেক সময় গুণগুণ করে মাদারকে কেন্দ্র করে নানা গীত গাইতে থাকেন।  যেমন হায়রে মাদারের খেলাগো, খেলমুইতো আমরা তো। আইসেন আইসেন বইসেন আপনিগো।  বাড়িতে মাদার এনে ধামাইল দেয়ার পরে গোসল সেরে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।  

 মাদারের মেলার আয়োজকদের একজন সাগর মিয়া বলেন, জন্মের পর থেকে মাদার খেলছি। আমাদের কয়েকপুরুষ ধরে এই প্রথা চলে আসছে। শেষদিন অর্থাৎ সোমবার মেলা বসে। মেলায় নানা ধরণের জিনিসপত্র আসে। অনেক কেনাকাটাও হয়। বিকেলে মাদারের বাঁশকে একটি বড় গাছের সাথে হেলান দিয়ে রেখে দেয়ার মাধ্যমে এই মেলা ও খেলার সমাপ্তি টানা হয়।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

কাজিপুরে দুইশ বছরের ঐতিহ্যের মাদার বাঁশের মেলা অনুষ্ঠিত

০১:১১:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় প্রতি বছরের মতো এবারেও অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী বাঁশের মেলা বা মাদার বাঁশের মেলা। উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়নের কুনকুনিয়া সর্দারপাড়ায় দুইশ বছরের পুরাতন এ মেলা জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রোববার বিকেল থেকে দোকানপাট বসে। চলে পরের দিন সোমবার বিকেল পর্যন্ত। তবে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আসা-যাওয়া চলে সপ্তাহজুড়ে। 

এ মেলাকে ঘিরে কুনকুনিয়া সর্দারপাড়া ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে চলে আনন্দ-উৎসব। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনেরা আসেন। চলে খাওয়া-দাওয়া। বিশেষ করে জামাই-ঝি নিয়ে আসা হয় বাড়িতে বাড়িতে। অনেকটা ঈদের ছুটির মতো এই গ্রামের যারা বাইরে বা দেশের নানাস্থানে থাকেন তারা মেলা উপলক্ষে ছুটি নিয়ে চলে আসেন বাড়িতে। 

 এ মেলা হয় একটি বিশেষ বাঁশকে কেন্দ্র করে। অনেক আগে থেকে এখানকার মানুষেরা বাঁশকে মাদার পীর হিসেবে গণ্য করে। একটি বড় বাঁশকে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে, চমর লাগিয়ে ও নানা রংয়ে সাজিয়ে ১৫-২০ জনের একটি দল বেরিয়ে পড়েন। ঢাক-ঢোল, সানাই বাজিয়ে গান গেয়ে বাড়ি বাড়ি যান তারা। এই দলটি  মাদারের ধামাইল, লাঠিবাড়ি খেলা ও শারীরিক নানা কৎরত দেখান। বিনিময়ে অনেকেই টাকা পয়সা, চাল-ডাল, নারকেল, খাবারসহ নানা কিছু দান করেন। কেউ কেউ মানত করে বাড়িতে মাদার নিয়ে এসে ধামাইল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। অনেক পরিবারের বউ ঝিদের উপর মাদারের আছর করে। মাদার চলাকালিন তারা মাছ মাংস কিছুই স্পর্শ করেন না। এসময় তিনি ঘরেই থাকেন । কারও সাথে কোন কথা বলেন না। তবে অনেক সময় গুণগুণ করে মাদারকে কেন্দ্র করে নানা গীত গাইতে থাকেন।  যেমন হায়রে মাদারের খেলাগো, খেলমুইতো আমরা তো। আইসেন আইসেন বইসেন আপনিগো।  বাড়িতে মাদার এনে ধামাইল দেয়ার পরে গোসল সেরে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।  

 মাদারের মেলার আয়োজকদের একজন সাগর মিয়া বলেন, জন্মের পর থেকে মাদার খেলছি। আমাদের কয়েকপুরুষ ধরে এই প্রথা চলে আসছে। শেষদিন অর্থাৎ সোমবার মেলা বসে। মেলায় নানা ধরণের জিনিসপত্র আসে। অনেক কেনাকাটাও হয়। বিকেলে মাদারের বাঁশকে একটি বড় গাছের সাথে হেলান দিয়ে রেখে দেয়ার মাধ্যমে এই মেলা ও খেলার সমাপ্তি টানা হয়।