বগুড়ার ধুনটে দুই কৃষকের প্রায় দুই বিঘা জমির আধাপাকা বোরো ধান ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধানের ক্ষতিতে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানা পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গোবিন্দপুর গ্রামের তিন ফসলি জমিতে ‘গ্রামীণ ব্রিকস’ নামে একটি ইটভাটা রয়েছে। সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে গড়ে ওঠা এ ভাটার কারণে প্রতি বছরই কৃষি ও পরিবেশের ক্ষতি হয়ে আসছে।
চলতি মৌসুমে ওই ইটভাটা সংলগ্ন জমিতে বোরো ধান চাষ করেন গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন। এর মধ্যে রফিকুলের ৩০ শতক এবং ইসমাইল হোসেনের ২৮ শতক জমিতে ধান ছিল।
চলতি বছরের জন্য ইট পোড়ানো কার্যক্রম কয়েক দিন আগে বন্ধ করলেও হঠাৎ ভাটার চিমনি দিয়ে বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত ধোঁয়া বের হতে থাকে। প্রথমে ক্ষয়ক্ষতি তেমন বোঝা না গেলেও ধীরে ধীরে দেখা যায় সবুজ ধানক্ষেতের গাছ লালচে হয়ে গেছে, পাতাগুলো কুঁকড়ে গেছে এবং শীষে চিটা দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষিবিদ জানান, সাধারণত কিছু চুল্লিতে আগুন রেখেই ভাটা বন্ধ করার নিয়ম। একবারে সব চুল্লি বন্ধ করে দিলে চিমনি দিয়ে প্রচুর ভারী সালফার ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, যা নিচে নেমে গাছের কাণ্ড ও পাতায় ঢুকে ফসল নষ্ট করে দেয়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলেন, ভাটার ধোঁয়ার কারণে ধানে চিটা হয়েছে। এতে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন ব্যয়ই তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর মাত্র ১০-১২ দিন পরেই ধান কাটার সময়। এমন সময় এ ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই এবং এলাকায় আর কোনো ইটভাটা দেখতে চাই না।
ভাটা মালিকদের পক্ষে মেসার্স গ্রামীণ ব্রিকসের অংশীদার গোবিন্দপুর গ্রামের গোলাম রব্বানী বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় ধানের ক্ষতি হয়নি। ধান পেকে যাওয়ায় এমন রঙ হয়েছে। তবে ভাটার তাপে পাতায় কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। মূলত পারিবারিক বিরোধের কারণে ভাটার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ছামিদুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গণশুনানি করে বিধিমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।